মৃত্যুক্ষুধা

লতিফা রুবির দিকে খানিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলল, “তুই তোর স্বামীকে ভালোবাসতিস?”
রুবি সহজ শান্তকণ্ঠে বলে উঠল, “না। সে তো আমার ভালোবাসা চায়নি, আমিও চাইনি। সে চেয়েছিল আমাকে বিয়ে করে ধন্য করার দাবিতে বিলেত যাওয়ার পথ-খরচা। তা সে পেয়েও ছিল। কিন্তু কপাল খারাপ, সইল না, বেচারার জন্য বড়ো দুঃখ হয় বুঁচি।” একটু থেমে আবার বলতে লাগল, “মৃত্যুর দিন-কতক আগে সে তার ভুল বুঝতে পেরেছিল। এই ভুলই হয়তো তার কাল হল। আমি সেবা-শুশ্ৰষা সবই করেছি, অবশ্য আমাকে খুশি করতে নয়, তাকে আর আমার বাপ-মাকে খুশি করতে। কিন্তু একদিন সে ধরে ফেলল আমার ফাঁকি! সে স্পষ্টই বলল, “তুমি আমায় ভালোবাস না, এর চেয়ে বড়ো দুঃখ আমার আর নেই রুবি। আমার সবচেয়ে কাছের লোকটিই আমার সবচেয়ে অনাত্মীয়, এ ভাবতেও আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। হয়তো আমি বাঁচতুম, কিন্তু এর পরেও আমার বাঁচবার আর কোনো সাধ নেই।”

-মৃত্যুক্ষুধা – পর্ব – ২৩ – কাজী নজরুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *